তাঁর শাপে ব্রহ্মা নরলোকে পুজো পান না‚ বিষ্ণুকে জন্ম নিতে হয় নানা অবতারে‚ শিব পূজিত হন লিঙ্গরূপে - Pratidin Bangla News | Bollywood, Hollywood, Celebrities, Religion & Sports News |

Post Top Ad

তাঁর শাপে ব্রহ্মা নরলোকে পুজো পান না‚ বিষ্ণুকে জন্ম নিতে হয় নানা অবতারে‚ শিব পূজিত হন লিঙ্গরূপে

Share This
brahma vishnu shiva
brahma vishnu mahesh
বৈদিক সভ্যতার সপ্ত ঋষির নামে আকাশে জ্বলজ্বল করে সপ্তর্ষিমণ্ডল | আকাশপাঠের পাশাপাশি আসুন একবার খোঁজার চেষ্টা করি সেই সাত ঋষিকে। হিন্দু পুরাণের নানা উৎসে সাত ঋষির নাম পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে | তবে সবথেকে বেশি স্থানে যাঁদের নাম রয়েছে তাঁদের কথাই বলব | সেই সাত ঋষি হলেন ভৃগু‚ অত্রি‚ অঙ্গীরা‚ বশিষ্ঠ‚ পুলস্থ্য‚ পুলহ ও ক্রতু। এই পর্বে ভৃগুর কথা।
মহর্ষি ভৃগু ছিলেন প্রজাপতি ব্রহ্মার মানসপুত্র | ঋক বৈদিক যুগে তিনি মনুর সমসাময়িক | মনুর সন্তান হল মানব | ভৃগুর সন্তানদের বলা হয় ভার্গব |
বৈদিক জনপদ ব্রহ্মবর্তে দোশি পর্বতে বধূসার নদীর পাশে ছিল তাঁর আশ্রম | এখন এই অঞ্চল পরে রাজস্থান হরিয়ানা সীমান্তে | স্কন্ধ পুরাণ অনুযায়ী‚ ভৃগু পরে চলে যান ভৃগুকচ্ছে ( আজকের গুজরাতে‚ নর্মদা নদীর পাশে )‚ জায়গাটির নাম কালক্রমে হয়ে দাঁড়ায় ভারুচ |


ভৃগুর এক পত্নী হলেন দক্ষকন্যা খ্যাতি | তাঁদের দুই পুত্র হলেন ধাতা ও বিধাতা | কন্যার নাম ভার্গবী | যিনি আবার বিষ্ণুপত্নী | আর এক পত্নী কাব্যমাতার পুত্র হলেন শুক্র | যিনি আবার শুক্রাচার্য রূপে অসুরদের গুরু হন | ভৃগুর পত্নী পুলোমা জন্ম দেন ঋষি চ্যবনের | আবার ভৃগুর এক পুত্র হলেন জমদগ্নি | যিনি আবার পরশুরামের পিতা |
একবার পুণ্যতোয়া সরস্বতীর তীরে বসেছিল মহাযজ্ঞের আসর | সম্মিলিত ঋষিরা স্থির করে উঠতে পারলেন না ত্রিদেবের মধ্যে কে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ | নিরূপণের ভার পড়ল ভৃগুর উপর |
ভৃগু প্রথমে গেলেন ব্রহ্মলোকে | যথাবিহিত সম্মান না দেখিয়েই জানালেন আগনমহেতু | শুনে তো মহাপ্রজাপতি রেগে অগ্নিশর্মা | ভৃগু কিনা তাঁদের মহত্ব বিচার করবেন ! তাঁর ক্রোধানল থেকে ভৃগুকে বাঁচালেন স্ত্রী সরস্বতী |
কিন্তু ব্রহ্মার এই আচরণে ভৃগু ক্রোধান্বিত হয়ে পড়লেন | তিনি অভিশাপ দিলেন‚ নরলোকে ব্রহ্মা পূজিত হবেন না | ভেবে দেখুন‚ রাজস্থানের পুষ্কর ছাড়া ব্রহ্মার মন্দির দুর্লভ |
এবার ভৃগু গেলেন কৈলাসে | কিন্তু মহাদেবের দেখা পেলেন না | কারণ তিনি তখন পার্বতীর সঙ্গে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত | রাগে ফুঁসতে থাকা ভৃগু অভিশাপ দিলেন‚ নরলোকে শিব পূজিত হবেন লিঙ্গ রূপে | পার্বতীর যোনিতে প্রোথিত শিবলিঙ্গ রূপে |
সবার শেষে ভৃগুর গন্তব্য বিষ্ণুলোক | গিয়ে দেখেন বিষ্ণু নিদ্রামগ্ন | কুপিত ভৃগু তাঁর বুকে পদচালনা করলেন | যে চিহ্ন অঙ্কিত হল‚ তাকে বলে শ্রীবৎস | নিদ্রা ভঙ্গ করে উঠলেন নারায়ণ | ভৃগুর উপর ক্রোধ প্রদর্শন না করে স্মিত হেসে প্রশ্ন করলেন‚ ‘ হে মহর্ষি‚ আমার কঠিন বুকে আপনার কোমল চরণ যে পড়ল তাতে সেটি আহত হয়নি তো ?’
নারায়ণের এই আচরণে ভৃগু স্থির করলেন ত্রিদেবের মধ্যে তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ | যদিও ভৃগুর এই আচরণে রেগে গেলেন বিষ্ণুপত্নী মহালক্ষ্মী | তিনি শাপ দিলেন ব্রাহ্মণরা কোনওদিন লক্ষ্মীর কৃপা পাবেন না | শেষে ভৃগু তাঁর আগমনের কারণ বললেন | তখন লক্ষ্মী ক্ষোভ প্রশমিত করে জানালেন‚ বিষ্ণুর উপাসনা করলে ব্রাহ্মণরা লক্ষ্মীর কৃপা থেকে বঞ্চিত হবেন না |
যাই হোক‚ যজ্ঞস্থলে ঋষিদের কাছে ফিরে এসে ভৃগু নিজের অভিজ্ঞতা বললেন | কিন্তু ঋষিরা তাঁর এই উদ্ধত আচরণ ভালভাবে নিলেন না | ভৃগু ক্ষমা চাইলেন দেবতাদের কাছে | এটাই স্থির হল‚ ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর তিন দেবতাই সমগুরুত্বপূর্ণ |
এ বার একটা তথ্য জানিয়ে রাখি‚ ভৃগু কিন্তু একবার কুপিত হয়ে নারায়ণকেও অভিশাপ দিয়েছিলেন | বিষ্ণু বা নারায়ণ সুদর্শন চক্র দিয়ে ভৃগুপত্নীর মস্তকচ্ছেদ করেছিলেন | কারণ ঋষিপত্নী দেবতা-অসুরদের যুদ্ধে অসুরদের সাহায্য করেছিলেন | যদিও স্ত্রীর প্রাণ ফিরিয়ে এনেছিলেন ভৃগু‚ তা সত্ত্বেও ক্রোধান্বিত এই ঋষি অভিশাপ দেন‚ বিষ্ণুকে বারবার নরলোকে জন্ম নিয়ে দুঃখ কষ্ট ভোগ করতে হবে | সেই থেকেই নাকি বিষ্ণু দশ অবতারে জন্ম নেন পৃথিবীতে |
এতদূর পড়ে মনে হতে পারে এই প্রতাপান্বিত ঋষি শুধু দেবতাদের সঙ্গে সম্মুখসমরে গিয়ে তাঁদের অভিশাপ দিয়ে গেছেন | কিন্তু এটা স্মর্তব্য যে মহর্ষি ভৃগু রচনা করেছেন জ্যোতিষ-সহ অন্যান্য শাস্ত্রের প্রামাণ্য আকর গ্রন্থ ভৃগুসংহিতা | আজও ভারতের নানা জায়গায় আছে তাঁর আশ্রম |

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Pages